পরকীয়া এবং জীবনসঙ্গীর সৌন্দর্যের কোনো সম্পর্ক নেই!
শিরোনাম: পরকীয়া = সৌন্দর্যের অভাব? না, ভয়ানক ভুল ধারণা!
অনেকেই নিশ্চয় এমন কথা শুনেছেন: “স্ত্রী সুন্দরী হলে স্বামী কি পরকীয়া করে?” বা “স্বামী খুব হ্যান্ডসাম হলে স্ত্রীর কি বাইরে চোখ যায়?” অথবা পরকীয়ার ঘটনা শুনলেই কানে ভেসে আসে – “নিশ্চয় সঙ্গী দেখতে ভালো না, তাই…”। একদম ভুল, ভয়ানক ভুল এবং ক্ষতিকর ধারণা! আসুন স্পষ্ট করে বলি: জীবনসঙ্গীর শারীরিক সৌন্দর্য বা আকর্ষণীয় চেহারার সাথে পরকীয়ার কোনো সরাসরি, কার্যকারণ সম্পর্ক নেই।
কেন এই ধারণা ভুল?
১. সুন্দর মানুষরাও পরকীয়া করে (এবং তাদের সঙ্গেও হয়): পৃথিবীতে অসংখ্য সুন্দরী নারী ও আকর্ষণীয় পুরুষ আছেন যারা পরকীয়ার শিকার হয়েছেন। আবার, অনেক সুন্দরী/সুন্দর ব্যক্তিও পরকীয়ায় জড়িয়েছেন। সৌন্দর্য কোনো “প্রতিরক্ষা কবচ” নয়, আবার তা পরকীয়ার “ট্রিগার”ও নয়। বহু সুপারস্টার, মডেলদের জীবনই এর জলজ্যান্ত প্রমাণ।
২. পরকীয়ার কারণ গভীর, বহুমুখী: পরকীয়ার পেছনে থাকে জটিল মানসিক, আবেগিক ও সম্পর্কগত কারণ:
* আবেগিক ঘাটতি: সঙ্গীর কাছ থেকে যথেষ্ট মনোযোগ, স্নেহ, সম্মান বা বোঝাপড়া না পাওয়া।
* যোগাযোগের অভাব: নিজের চাহিদা, কষ্ট বা আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে না পারা বা সঙ্গীর তা শুনতে/বুঝতে না চাওয়া।
* একঘেয়েমি ও রুটিন: দীর্ঘদিনের সম্পর্কে নতুনত্বের অভাব, রোম্যান্সের অনুপস্থিতি।
* নিজের অভ্যন্তরীণ শূন্যতা বা অসম্মানবোধ: আত্মবিশ্বাসের অভাব, জীবনে সন্তুষ্টির অভাব, যা অন্য কারো মনোযোগ দিয়ে পূরণের চেষ্টা।
* সীমানা নির্ধারণে ব্যর্থতা: অন্যদের সাথে সম্পর্কে সুস্পষ্ট সীমারেখা টানতে না পারা।
* অবহেলা বা অবজ্ঞা: সঙ্গী দ্বারা ক্রমাগত অবহেলিত বা ছোট মনে হওয়া।
* অবাস্তব প্রত্যাশা: সম্পর্ক বা সঙ্গী সম্পর্কে রূপকথার মতো অবাস্তব ধারণা পোষণ করা।
৩. সৌন্দর্য ক্ষণস্থায়ী ও আপেক্ষিক: শারীরিক সৌন্দর্য সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল। যা একজনের কাছে “সুন্দর”, অন্যজনের কাছে তা নাও হতে পারে। একটি সুস্থ সম্পর্কের ভিত্তি কখনোই শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্যের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। তা ভঙ্গুর।
৪. ভুল দোষারোপ ও আত্মসম্মানহানি: এই ধারণা পরকীয়ার শিকার ব্যক্তির (প্রায়শই নারী) উপর চরম অবিচার করে। তাকে যেন দোষারোপ করা হয় – “তুমি যথেষ্ট সুন্দরী/আকর্ষণীয় হওনি, তাই তোমার সঙ্গী অন্য কাউকে খুঁজেছে।” এটি তার আত্মসম্মানকে ভীষণভাবে আঘাত করে এবং প্রকৃত সমস্যাকে আড়াল করে।
তাহলে সৌন্দর্যের ভূমিকা কী?
-
প্রাথমিক আকর্ষণ: শারীরিক সৌন্দর্য প্রাথমিক আকর্ষণের একটি উপাদান হতে পারে, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু এই প্রাথমিক আকর্ষণ একটি দীর্ঘস্থায়ী, বিশ্বস্ত সম্পর্কের একমাত্র বা প্রধান ভিত্তি নয়।
-
সম্পর্কের একটি মাত্রা: সৌন্দর্য একটি সম্পর্কের আনন্দের অংশ হতে পারে, কিন্তু তা সমগ্র সম্পর্ক নয়। সম্পর্ক টিকে যায় সম্মান, বিশ্বাস, বোঝাপড়া, সহমর্মিতা, শেয়ার করা মূল্যবোধ এবং একে অপরের জন্য অবদান রাখার মাধ্যমে।
পরকীয়া রোধে করণীয়:
-
গভীর যোগাযোগ: খোলামেলা, সৎ ও নিয়মিত কথা বলা।
-
সময় দেওয়া ও মনোযোগ: একে অপরের জন্য গুণগত সময় বের করা, একে অপরের কথা মন দিয়ে শোনা।
-
আবেগিক সংযোগ বজায় রাখা: স্নেহ, প্রশংসা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, ছোট ছোট বিষয়ে যত্ন নেওয়া।
-
সমস্যা সমাধান: অসন্তোষ বা সমস্যা দেখা দিলে একসাথে মোকাবিলা করা, জমিয়ে না রাখা।
-
সীমানা রক্ষা: অন্যদের সাথে (বিশেষ করে বিপরীত লিঙ্গের) সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও সম্মানজনক সীমানা নির্ধারণ।
-
পেশাদার সাহায্য নেওয়া: সম্পর্কে গভীর সমস্যা দেখা দিলে কাউন্সেলিং নেওয়া।
উপসংহার:
পরকীয়ার জন্য জীবনসঙ্গীর চেহারা বা সৌন্দর্যকে দায়ী করা সহজ পথ, কিন্তু সত্যিকার অর্থে তা কেবলই একটি কুসংস্কার এবং ভুল দোষারোপ। এটি পরকীয়ার প্রকৃত, গভীর ও জটিল কারণগুলোকে অস্বীকার করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির উপর বাড়তি যন্ত্রণা চাপায়। আসুন আমরা এই ক্ষতিকর ধারণা থেকে বেরিয়ে আসি। একটি সুস্থ, দীর্ঘস্থায়ী ও বিশ্বস্ত সম্পর্ক গড়ে ওঠে পারস্পরিক সম্মান, বিশ্বাস, যোগাযোগ, বোঝাপড়া এবং অঙ্গীকারের উপর – না যে কারো শারীরিক সৌন্দর্যের উপর। পরকীয়া একটি পছন্দ – এবং সেই পছন্দের দায় বাহ্যিক সৌন্দর্যের অভাবে নয়, সম্পূর্ণরূপে যে ব্যক্তি তা করে তার উপরেই বর্তায়।
💖 প্রেম বজায় রাখুন, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন, এবং প্রতিদিন নতুন করে বেছে নিন একে অপরকে। আপনার বিবাহের পথ শান্তিময় হোক!
✉️ বিশ্বাস আর নিরাপত্তায় – আপনার বিবাহের যাত্রা শুরু হোক পাত্রপাত্রী.কম এর সাথে!
👉 www.patrapatri.com এ ভিজিট করুন!



