সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে
ভূমিকা:
বাংলা প্রবাদে বলা হয়, “সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে”—এ কথাটির মধ্যে লুকিয়ে আছে এক গভীর জীবন-দর্শন। যদিও সমাজের প্রতিটি সদস্যের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, তবুও এক নারীর প্রজ্ঞা, ধৈর্য, স্নেহ আর আত্মত্যাগে গড়ে ওঠে একটি সুখী সংসারের ভিত। রমণীর গুণ শুধু রান্নাবান্না বা সংসার সামলানোতেই সীমাবদ্ধ নয়; তার চিন্তাশক্তি, সহমর্মিতা, এবং মানসিক দৃঢ়তাও একটি পরিবারের সুখ-শান্তি নির্ধারণ করে।
রমণীর নানা রূপ:
একজন নারী কখনো কন্যা, কখনো স্ত্রী, কখনো মা। প্রতিটি রূপেই তার রয়েছে নিজস্ব দায়িত্ব ও অবদান। স্ত্রী হিসেবে সে শুধু স্বামীর জীবনসঙ্গী নয়, বরং বন্ধু, উপদেষ্টা ও প্রেরণাদাত্রী। পরিবারের সব সদস্যের সুখ-দুঃখে সে সর্বদা পাশে দাঁড়ায়।
সুখী সংসারের উপাদান:
রমণীর গুণ মানে শুধু গৃহস্থালির কাজ জানাই নয়, বরং তার মধ্যে থাকা সহনশীলতা, ভালোবাসা, এবং বোঝাপড়ার ক্ষমতাই সংসারকে করে তোলে সুখী। একজন বুদ্ধিমতী নারী জানেন কখন কথা বলতে হবে, কখন চুপ থাকতে হবে, কীভাবে পরিবারের ছোটখাটো সমস্যা সমাধান করতে হয়।
আধুনিক নারীর ভূমিকা:
আজকের নারীরা শুধু গৃহকোণে সীমাবদ্ধ নন। তারা বাইরের জগতেও সমানভাবে কাজ করছেন, পরিবারের পাশাপাশি সমাজেও রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তারপরও ঘরে ফিরে তারা সন্তান, স্বামী ও পরিবারকে সময় দিতে ভোলেন না। এই ভারসাম্যই প্রমাণ করে, সংসার সুখের হয় রমনীর গুণেই।
বাস্তব উদাহরণ ১: গ্রামের গৃহবধূর প্রজ্ঞা
রাজশাহীর একটি গ্রামে সুমিতা নামের এক গৃহবধূ রয়েছেন। তার স্বামী কৃষক, আয় অনিয়মিত। সুমিতা নিজের ঘরকে সুখী রাখতে নিজ হাতে শাকসবজি চাষ শুরু করেন। মুরগি পুষে, ডিম বিক্রি করে সংসারে আয় বাড়ান। সন্তানদের শিক্ষায় গুরুত্ব দেন, স্বামীকে সবসময় মানসিকভাবে সমর্থন দেন। তাঁর স্মার্ট ব্যবস্থাপনা ও মমতার কারণে তাদের ছোট্ট পরিবারে অভাব থাকলেও সুখের কোনো কমতি নেই।
বাস্তব উদাহরণ ২: চাকুরির পাশাপাশি সংসার সামলানো এক নারী
ঢাকার মিরপুরে থাকেন তানজিলা, একজন স্কুলশিক্ষিকা। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল স্কুলে থাকেন, রাতে সন্তানদের পড়ান, স্বামীর যত্ন নেন এবং রান্না-বান্নাও সামলান। ক্লান্তি থাকলেও তার মুখে থাকে হাসি। তার স্বামী বলেন, “তানজিলাকে ছাড়া এই সংসার দাঁড়াত না।” তানজিলার সহানুভূতি, ধৈর্য ও দায়িত্ববোধই তাদের সংসারে আনন্দ এনেছে।
বাস্তব উদাহরণ ৩: করোনা মহামারির সময় এক নারীর আত্মত্যাগ
২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় নারায়ণগঞ্জের রোজিনা বেগমের স্বামী চাকরি হারান। তিনি নিজে মাস্ক তৈরি করে বিক্রি শুরু করেন, পাড়া-প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় ছোট ব্যবসা দাঁড় করান। সন্তানদের স্কুলের ফি, পরিবারের খরচ সবকিছু নিজের কাঁধে তুলে নেন। কঠিন সময়ে তার সাহস, উদ্যম আর ভালোবাসাই পুরো পরিবারকে এক করে রাখে।
উপসংহার:
নারীর অবদান স্বীকৃত হওয়া প্রয়োজন। একজন রমণীর ভালোবাসা, যত্ন ও মমতা ছাড়া কোনো সংসারই পূর্ণতা পায় না। তাই শুধু প্রবাদ নয়, বাস্তবেও প্রতিটি সংসারেই এই সত্য প্রতিফলিত হয়—সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে।




