প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে: ইসলাম ও বাংলাদেশের আইনে কী বলে?
🔍 ভূমিকা
বাংলাদেশের সমাজে বহু বিবাহ এখনো একটি আলোচিত ও সংবেদনশীল বিষয়। বিশেষ করে, যখন কোনো পুরুষ প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করেন, তখন প্রশ্ন ওঠে: এটি কি বৈধ? ইসলাম কী বলে? বাংলাদেশের আইন কীভাবে এই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে?
এই লেখায় আপনি জানবেন ইসলামি শরিয়ত এবং বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের আলোকে, প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করা কতটুকু বৈধ এবং এর আইনি পরিণতি কী হতে পারে।
🕌 ইসলামি দৃষ্টিকোণ
ইসলামে একজন পুরুষ নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করতে পারেন।
সূরা নিসা (৪:৩)-তে আল্লাহ বলেন:
“…তবে যদি তোমরা ভয় করো যে, তোমরা ন্যায়বিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনই যথেষ্ট…”
🔸 অর্থাৎ, ইসলাম দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দেয়, তবে তার মূল শর্ত হলো:
-
সকল স্ত্রীর প্রতি সমান অধিকার ও ন্যায়বিচার
-
কারো প্রতি অবিচার না করা
তবে ইসলামে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি বাধ্যতামূলক নয়, যদিও তা নৈতিক ও পারিবারিক শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
⚖️ বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী
বাংলাদেশে মুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য আইন হলো:
Muslim Family Laws Ordinance, 1961।
📜 Section 6 – Second Marriage with Permission:
যদি কোনো পুরুষ তার প্রথম স্ত্রীর জীবিত থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে করতে চান, তাহলে:
-
প্রথম স্ত্রীর লিখিত সম্মতি নিতে হবে
-
স্থানীয় ‘আরবিট্রেশন কাউন্সিল’ বা সালিশি পরিষদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে
-
বিয়ের যথার্থ কারণ ব্যাখ্যা করে আবেদন করতে হবে
❌ আইন না মানলে কী হবে?
-
প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ও আরবিট্রেশন কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলে—
-
১ বছরের কারাদণ্ড, বা
-
১০,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে
-
-
বিয়েটি বৈধ (valid) হলেও আইনবিরুদ্ধ (illegal) বলে গণ্য হবে
-
স্ত্রী চাইলে আদালতে প্রতারণা ও আর্থিক ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারেন
📌 কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
🔹 প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না থাকলেও কি বিয়ে বৈধ হবে?
✔️ হ্যাঁ, কিন্তু তা আইনগতভাবে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং শাস্তিযোগ্য।
🔹 আরবিট্রেশন কাউন্সিল বলতে কী বোঝানো হয়?
✔️ এটি স্থানীয় প্রশাসনের আওতাধীন একটি সালিশি পরিষদ, যা দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে অনুমতি দেয় বা না-ও দিতে পারে।
🔹 স্ত্রী চাইলে কী করতে পারেন?
✔️ স্ত্রী আদালতে মামলা করে স্বামীর বিরুদ্ধে শাস্তি চাইতে পারেন, এবং চাইলে বিবাহবিচ্ছেদ বা ক্ষতিপূরণের দাবি তুলতে পারেন।
✅ উপসংহার
দ্বিতীয় বিয়ে করা ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী অনুমোদিত হলেও, বাংলাদেশের আইনে এটি নিয়ন্ত্রিত এবং শর্তসাপেক্ষ। তাই—
প্রথম স্ত্রীর লিখিত সম্মতি এবং সালিশি কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
সাম্প্রতিককালে বহু পুরুষ আইনি জটিলতায় পড়েছেন শুধু এই নিয়ম না মানার কারণে। পারিবারিক সুখ-শান্তি বজায় রাখতে এবং আইনি জটিলতা এড়াতে অবশ্যই আইন মেনে চলা প্রত্যেকের দায়িত্ব।
📣 বিশেষ পরামর্শ:
দ্বিতীয় বিয়ের পরিকল্পনা করলে আগে আইনজীবীর পরামর্শ নিন এবং প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন। একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে বড় সমস্যার কারণ হতে পারে।